চশমার লেন্স পরিস্কার এবং সংরক্ষন করার কতিপয় বিষয়
প্রতিদিন আপনার লেন্সগুলিকে পরিস্কার করে লেন্সের স্ক্রাচ পরা থেকে প্রতিরোধ করুন এবং চোখের অন্যান্য ক্ষতি প্রতিরোধ করুন।
কিন্তু লেন্স পরিস্কার করার কিছু নিয়ম কানুন আছে। অনেকেই ভুল উপায়ে চশমার লেন্স পরিস্কার করে লেন্সের ক্ষতি সাধন করেন, যা চোখের জন্যও ক্ষতিকর।
চশমার লেন্সের কোন ধরণের ক্ষতি না করে অথবা দাগ না ফেলে পরিষ্কার করার জন্য নীচের টিপসগুলি অনুসরণ করুন। এই একই টিপস সানগ্লাস, সেফটি গ্লাস এবং স্পোর্টস গ্লাসে পরিষ্কার করার জন্য প্রযোজ্য।
১। লেন্স পরিস্কার করার আগে ভালভাবে আপনার হাত ধুয়ে শুকিয়ে দিন এবং ভালোভাবে শিউর হয়ে নিন যে, আপনার হাতে কোন ধরণের ময়লা নেই। আপনার হাত পরিষ্কার করার জন্য লোশন, সাবান বা তরল ডিশওয়াশিং এবং শুকানোর জন্য পরিষ্কার টাউয়েল ব্যবহার করুন।
২। টেপের পরিস্কার পানিতে আলতো ভাবে প্রথমে লেন্সগুলো ধুয়ে নিন যা আপনার লেন্সের গভীরে জমে থাকা ধুলিকণা এবং অন্যান্য ময়লা মুছে ফেলবে। ভুলেও কখনো গরম পানি অথবা হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে লেন্স পরিস্কার করবেন না । এতে আপনার লেন্সের কোটিং এর ক্ষতি হবে।
৩। অতঃপর প্রতিটি লেন্সে লোশন মুক্ত তরল ডিসওয়াশিং এক ফোটা করে দিয়ে অথবা আঙ্গুলের মাথায় পরিমান মতো তরল ডিসওয়াশিং লাগিয়ে লেন্সে লাগান। ভালো ডিসওয়াশিং ব্যবহার করুন যেটাতে লোশন এড করা নেই এবং ময়াশ্চারাইজার নেই।
৪। লেন্সের উভয় পাশে ঘসতে থাকুন। এমনভাবে ঘসুন যেন লেন্সের কোন অংশেই ডিসওয়াশিং যেতে বাকি না থাকে। তারপর চশমার প্রতিটি পার্ট ঘসতে থাকুন। নোজ প্যাড, ট্যাম্পেল, ফ্রেম, প্রতিটি অংশ ভালোভাবে ঘসুন। কোন অংশেই যেন ময়লা জমে না থাকে। ময়লা আর অবশিষ্ট নেই, এটা সম্পুর্ণ নিশ্চিত হয়ে ঘসা বন্ধ করুন।
৫। লেন্স এবং ফ্রেমের উভয় পাশেই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধুয়ে নিন যেন কোথাও কোন প্রকার তরল ডিসওয়াশিং লেগে না থাকে। লেন্স থেকে পানি অপসারনের জন্য আলতো করে ঝাঁকাতে পারেন যেন পানি নিস্কাশন হয়।
৬। নরম সুতির তোয়ালে দ্বারা সতর্কতার সাথে লেন্স এবং ফ্রেমটি পরিষ্কার করে শুকিয়ে দিন। পরিস্কার করার পর যদি কোন স্ক্রাচ অথবা ব্লার পরিলক্ষিতি হয়, সেই ক্ষেত্রে মাইক্রোফাইবার কাপর দিয়ে লেন্সগুলি পুণরায় পরিস্কার করুন। এই মাইক্রোফাইবার কাপড়গুলো সাধারণত চশমা ক্রয়ের সময় চশমার দোকান থেকেই প্রতিটি ফ্রেমের সাথে দিয়ে থাক। তবে মাইক্রোফাইবার কাপড়ের চেয়ে সাধারণতঃ গেঞ্জির কাপড়গুলো লেন্স পরিস্কার করার জন্য ভালো।
লেন্স ক্লিনার এবং ক্লিনিং ক্লথের কাজ
সাধারনত এই দুটো জিনিশ আপনি প্রতিটি চশমার দোকানে পাবেন। উপরোক্ত পদ্ধতিতে ডিশওয়াশিং এর মাধ্যমে যদি লেন্স পরিস্কার করার মতো সময় এবং সুযোগ না থাকে এবং আপনি যদি ট্রাভেলিং থাকেন তবে লেন্স ক্লিনারের মাধ্যমে আপনি লেন্স পরিস্কার করে নিতে পারেন। যদি আপনার হাতের কাছে পানি না থাকে তবে লেন্সের উভয় পাশে কয়েকবার লেন্স ক্লিনারটি স্প্রে করুন এবং ক্লিনিং ক্লথ দিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার করুন।
যদি আপনার লেন্সগুলি এন্টি-রিফেক্টিভ কোটিং থেকে থাকে তবে লেন্স ক্লিনার ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি যে ক্লিনারটি ব্যবহার করছেন সেটা এন্টি-রিফেক্টিভ লেন্সে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত।
মাইক্রোফাইবারের ক্লিনিং ক্লথগুলো লেন্স পরিস্কার করার জন্য চমৎকার পছন্দ। এই কাপড়গুলো লেন্সকে খুব কার্যকরভাবে পরিস্কার করে এবং লেন্স থেকে তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে। সুতরাং ক্লিনিং ক্লথ ব্যবহার করার আগে দেখে নিন সেটা মাইক্রোফাইবারের কিনা এবং লেন্স পরিস্কার করার জন্য উপযোগী কিনা।
স্ক্রাচ এবং অন্যান্য বিষয়!
দুর্ভাগ্যবশত আপনার লেন্সে একবার স্ক্রাচ পরে গেলে সেটা কিউর করার মতো কোন ম্যাজিক এখনো আবিস্কার হয়নি। তবে বাজারে কিছু লেন্স পাওয়া যায় যেগুলো স্ক্রাচ ফ্রি। তবে সেটাও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। দোকানি হয়ত আপনাকে ৬ মাস এক বছরের ওয়ারেন্টি দিবে। কিন্তু লেন্সে স্ক্রাচ পড়বেই। আপনি যত দামি লেন্সই ব্যবহার করুন না কেন। স্ক্রাচ ফ্রি লেন্সগুলো সাধারনত এন্টি রিফ্লেক্টিভ কোটিং হয়ে থাকে। তবে আপনার যদি সামর্থ থাকে তবে লেন্স ক্রয়ের সময় স্ক্রাচ ফ্রি লেন্স ক্রয় করুন ওয়ারেন্টিসহ।
মাঝে মাঝে দোকানে অথবা অপ্টিশিয়ানের কাছে গিয়েও আপনি লেন্স পরিস্কার করে আনতে পারেন। যদি লেন্স ব্যাতিত চশমার অন্যান্য অংশ পরিস্কার করা আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে পরে তবে প্রফেশনাল লোক দ্বারা লেন্স পরিস্কার করান।
চশমার লেন্সে খুব সহজেই স্ক্রাচ পড়তে পারে যদি আপনি সেগুলোকে সঠিকভাবে যত্ন না করেন। সবসময় একটি প্রটেক্টিভ বক্সের মধ্য আপনার চশমাটি সংরক্ষন করুন। তবে সেই বক্সটিও কিন্তু অনেক পরিস্কার হতে হবে। টেবিলে চশমা রাখার সময় কখনোই লেন্সের নিম্নভাগ টেবিলে রাখবেন না। টেম্পলটা যেন সব সময় টেবিলে সংস্পর্শ করে এবং লেন্সগুলো যেন উপরিভাগে থাকে। তাতে আপনার লেন্স স্ক্রাচ থেকে মুক্ত থাকবে।
তবে সর্বশেষ কথা হচ্ছে, একটি লেন্সেই আপনার সারাজীবন যাবেনা। আপনার চোখের ভিশন ক্লিয়ার রাখার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট একটা সময় পরে লেন্স পরিবর্তন করতে হবে। তবে কমদামী লেন্স এবং বেশীদামি লেন্সের মধ্য বিস্তর ফারাক রয়েছে। চশমার ফ্রেম আপনার যেমনি হোক, লেন্স হতে হবে কোয়ালিটি সম্পন্ন।