কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে ধরণের সাবধাণতাগুলো অবলম্বন করবেন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নয়নের আশীর্বাদ স্বরূপ মোবাইল ও ল্যাপটপ এখন আমাদের নিত্য সঙ্গী। প্রতিটি মানুষের হাতেই এখন স্মার্ট ফোন। আমাদের চোখ সারাদিন পরে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে। যার ফলে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের দৃষ্টিসমস্যা। চশমা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে গিয়েছে। ১ বছরের বাচ্চাসহ ৮০ বছরের বৃদ্ধ, সবার চোখেই চশমা। এর মধ্যে আবার অনেকেরই চশমা ব্যবহারে রয়েছে প্রবল অনীহা। বিশেষত সৌন্দর্য সচেতন মানুষের কাছে চশমা এখন অপছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তাই ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লাসিক (LASIK) ও কন্টাক্ট লেন্সের (Contact Lens) মতো বিকল্প উপায়গুলো। তবে কন্টাক্ট লেন্স দামে সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা অনেক সময় না জেনে, না বুঝে হুটহাট করে কন্টাক্ট লেন্স কিনে ব্যবহার করা শুরু করে দেই। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে এবং লেন্সের যত্ন না নিলে এর জন্যে বেশ ভুগতে হতে পারে। নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার মুল্যবান চোখ। কমদানি লেন্স ব্যবহারও চোখের জন্য ক্ষতিকর। আর কন্টাক্ট লেন্সের যত্ন নেয়া একটি অপরিহার্য বিষ। আসুন, কন্টাক্ট লেন্সের যত্নে করণীয় কি কি তা জেনে নেই-
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের সময় করণীয়:
১। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের পূর্বে পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ভুলেও সাবান ব্যবহার করবেন না। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে লেন্স ব্যবহার করা চোখের জন্য ক্ষতিকর। এরপর পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে হাত মুছে অতঃপর কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করুন।
২। কখনোই কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমানো যাবে না। লেন্স পরার পর অবশ্যই ঘুমানোর আগে সেটা খুলে রাখতে হবে।
৩। কন্টাক্ট লেন্সকে কখনোই সাধারণ পানির সংস্পর্শে আনা যাবে না। এটা ক্ষতিকর। তাই গোসল এবং সাঁতার কাটার সময় অবশ্যই কন্টাক্ট লেন্স খুলে রাখতে হবে নইতবা চোখে এমন কিছু পরিধান করতে হবে যাতে চোখের ভেতর পানি না ঢুকে।
কন্টাক্ট লেন্সের যত্ন:
১। প্রতিবার ব্যবহারের পর লেন্সটিকে খুলে কন্টাক্ট লেন্সের জন্যে নির্ধারিত সলিউশন দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে কখনই লালা বা পানি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। বাজারের সবচেয়ে ভালো সলিউশনটি ব্যবহার করবেন।
২। পরিষ্কার করার পর লেন্সটি অবশ্যই লেন্সের জন্যে নির্ধারিত সলিউশন এ রাখতে হবে। পানিতে রাখা যাবে না। প্রতিবার ব্যবহারের পরে সলিউশন পরিবর্তন করতে হবে।
৩। চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে নির্দিষ্ট সময় পর পর কন্টাক্ট লেন্স বদলাতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিন না।
কন্টাক্ট লেন্সের কাভার এর যত্ন:
১। লেন্সের ন্যায় লেন্সের কাভারটিও নিয়মিত নির্ধারিত সলিউশন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার টিস্যু বা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। পরিস্কার জায়গায় রাখতে হবে লেন্সের জন্য নির্ধারিত কিট বক্সটি।
২। লেন্স কাভারটি প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর বদলাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন তিন মাসের বেশী না যায়।
লেন্স সলিউশন এর যত্ন:
১। কাভারে থেকে যাওয়া পুরাতন সলিউশনের সাথে কখনই নতুন সলিউশন মেশাবেন না। প্রয়োজনে পুরাতন সলিউশন ফেলে দিয়ে লেন্স কাভারটি আগের নিয়মে পরিষ্কার করতে হবে। দুটি সলিউশন একসাথে মেশালে লেন্সের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
২। চশমার দোকানী নয় বরং চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত লেন্স সলিউশন ব্যবহার করুন। কমদানি সলিউশন আপনার চোখ এবং লেন্স, উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
কন্টাক্ট লেন্সের অসতর্ক ব্যবহারের ঝুঁকিসমূহ
কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করলে চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকি থাকে। নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার চোখের দৃষ্টি। এছাড়াও ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল, ফাংগাল সহ চোখের যেকোন ইনফেকশনে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কন্টাক্ট লেন্সটিতে পাওয়ার দেয়া থাকলে (ক্ষীণ দৃষ্টি বা দূর দৃষ্টির ক্ষেত্রে), অবশ্যই একই পাওয়ার সম্বলিত একটি চশমা সব সময়ই কাছে রাখতে হবে। লেন্স জনিত যেকোন সমস্যায় লেন্স খুলে চশমা ব্যবহার করুন।
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের পর চোখ লাল হয়ে গেলে, ব্যথা করলে, চোখে অস্বস্তি অনুভব করলে এবং চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা অন্য যেকোন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত লেন্সটি খুলে ফেলুন এবং অনতি বিলম্বে একজন চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এছাড়া লেন্স নির্বাচন থেকে শুরু করে যেকোন সমস্যায় চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেহের অমূল্য সম্পদ চোখ মাত্র দুইটি। তাই এর যত্নে যথাযথ সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিৎ। যথাযথ যত্ন ও সতর্কতা না নিয়ে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে এই অমূল্য সম্পদকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।
কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারকারীদের অনেকেই অ্যালার্জি ও ইনফেকশনে ভোগেন। সঠিকভাবে লেন্স ব্যবহার না করার কারণেই এমনটা হয়। আপনার যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে এ ধরনের সমস্যা হয় তাহলে স্বাস্থ্য সতর্কতাগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। কোনো কারণে এমনটা হলে সে কারণ নির্ণয় করুন এবং সংশোধন করুন। এর পরেও যদি সমস্যা না যায় তাহলে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বাদ দিতে হবে।